ঢাকা,সোমবার, ২০ মে ২০২৪

চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপদে

নৌকার মনোনয়ন কে পাচ্ছে ফলাফল মিলবে আজ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপদে এই পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকার চেষ্ঠায় আছেন ৮ প্রার্থী। তদমধ্যে সরকারি দল আওয়ামীলীগে আছে ৬জন, বিএনপি থেকে একজন এবং নাগরিক কমিটির ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন একজন। বর্তমানে ভোটের মাঠে আট প্রার্থীকে নিয়ে ভাবছেন পৌরবাসি। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দুইজন। তৎমধ্যে বুধবার বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক মেয়র ও চকরিয়া পৌরসভা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম হায়দার। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আলহাজ জিয়াবুল হক।

অপরদিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ থেকে মেয়রপদে কোন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেনি। বর্তমানে আওয়ামীলীগ তথা নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত ৬জন প্রার্থী আছেন ঢাকায়। গেল এক সপ্তাহধরে ঢাকায় অবস্থান করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নৌকার টিকেট পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জোর চেষ্ঠা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রত্যাশী ৬জন প্রার্থী ঢাকায় অবস্থান করে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় দলের হাইকমাণ্ডে নৌকার জন্য ছুটাছুটিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়নাল, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন, সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু। অবশ্য গতমাসে মনোনয়ন প্রত্যাশী চকরিয়ার এই ৬ আওয়ামীলীগ নেতার নাম এবং তাদের বায়োডাটা প্রস্তাব আকারে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে প্রেরণ করেছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ।

আওয়ামীলীগের দলীয় সুত্রে জানা গেছে, আগামী ১৩ মার্চ চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তা নির্ধারণ হবে। এইদিন দলের পক্ষথেকে নৌকা টিকেট প্রাপ্ত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করবেন আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপরেই মুলত মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নফরম সংগ্রহ করবেন আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী। সেই কারণে দলীয় সিদ্বান্তের আগে কোন প্রার্থী এখনই মনোনয়নফরম সংগ্রহ করছেন না বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল এক শীর্ষ নেতা।

সচেতন মহলের অভিমত, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬ জন প্রার্থী নৌকার টিকেট পেতে ঢাকায় অবস্থান করলেও নির্বাচনী মাঠে কৌশলে হাটঁছেন বিএনপি এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। কৌশল হিসেবে তাঁরা আওয়ামীলীগের পক্ষথেকে কোন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেলে ভোটের মাঠে হিসাব পাল্টাতে পারবেন বিএনপি অথবা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের পক্ষথেকে জনপ্রিয় কোন একজন প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে সেইক্ষেত্রে নির্বাচন করবেন কী, করবেন না তা নিয়ে নতুন করে ভাববেন বিপরীত মেরুর প্রার্থীরা।

জানা গেছে, দেড় লক্ষাধিক মানুষের নগরী চকরিয়া পৌরসভা। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভা প্রথমশ্রেণীতে উন্নীত হবার পর থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বদৌলতে মানুষের মৌলিক চাহিদার পরিধিও বেড়েছে। তাতে বদলে যেতে শুরু করেছে জীবনচিত্রও। ২৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত চকরিয়া পৌরসভার ইতোপুর্বে চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আনোয়ারুল হাকিম দুলাল। দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি (বর্তমান সাংসদ) আলহাজ জাফর আলম। ততৃীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি আলহাজ নুরুল ইসলাম হায়দার। সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের টিকেটে মেয়র নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী।

পৌরবাসির অভিমত, পৌরসভা প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সাংসদ জাফর আলমের পর বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরীর আমলে চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে অভুতপুর্ব উন্নয়নকর্মকাণ্ড তরান্¦িত হয়েছে। মেয়র আলমগীর চৌধুরীর মতে, গেল পাঁচবছরে চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে অন্তত আড়াইশত কোটি টাকার কমপক্ষে দুইশতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যার সুফল ইতোমধ্যে চকরিয়া পৌরবাসি পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে মেগাউন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে চলমান কাজগুলো সমাপ্ত হলে চকরিয়া পৌরসভার দেড়লক্ষাধিক মানুষ শতভাগ নাগরিক সেবা ভোগ করতে পারবে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনযায়ী আগামী ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচন। মধ্যে আরও একমাস সময় বাকী রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি জনপদে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে

সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাট-বাজার ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নির্বাচনি আলোচনা সমালোচনা। ইতিমধ্যেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শুরু করেছেন। একইসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন গনসংযোগ ও প্রচারণা কার্যক্রম।

এবারের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চকরিয়া পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের বর্তমান ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৪৮ হাজার ৭শত ২৪ জন। তৎমধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ২৫ হাজার ৮শত ৯৯ ও নারী ভোটার হচ্ছে ২২ হাজার ৮শত ২৫ জন। মোট ১৮টি কেন্দ্রে ভোটাররা এবারই প্রথম ভোট দেবেন ইভিএম পদ্ধতিতে।

পাঠকের মতামত: